Friday, December 1, 2023
Homeস্বাস্থ্যবাংলাদেশে ট্রায়াল হওয়া ডেঙ্গু টিকা সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

বাংলাদেশে ট্রায়াল হওয়া ডেঙ্গু টিকা সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানের আবিষ্কার করা ডেঙ্গু টিকা সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ‘সফলভাবে ট্রায়াল বা পরীক্ষা’ চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বা আইসিডিডিআরবি’র বিজ্ঞানীরা। এই টিকার একটি ডোজ ডেঙ্গুর চারটি ধরণের জন্যই কার্যকর হবে বলে দেখতে পেয়েছেন তারা।

এই টিকা আবিষ্কার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ বা এনআইএইচ। টিকার নাম দেয়া হয়েছে টিভি০০৫।

ডেঙ্গু টিকার দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা ছিল বাংলাদেশে। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের লার্নার কলেজ অব মেডিসিন এবং বাংলাদেশের আইসিডিডিআরবি’র গবেষকরা যৌথভাবে এটি পরিচালনা করেছেন।

আইসিডিডিআরবি গবেষকরা দাবি করছেন, ডেঙ্গু টিকার দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষে দেখা গেছে এটি শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে প্রয়োগের জন্য নিরাপদ এবং এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম।

ডেঙ্গুর মোট চারটি ধরণ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ এবং ডেন-৪।

গবেষকরা বলছেন, ডেঙ্গু টিকা আবিষ্কারে এনআইএইচ প্রথম প্রতিষ্ঠান নয়। এর আগে সানোফি ফার্মাসিউটিক্যালস এবং তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালস ডেঙ্গু টিকা তৈরি করেছে।

“সানোফির টিকা তিনটি আলাদা ডোজের এবং এটি নয় বছরের কম বয়সী শিশু, যারা আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে, তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। আর তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালসের ডেঙ্গুর টিকা দুই ডোজের। এই টিকা ডেঙ্গুর মাত্র একটি ধরণের ক্ষেত্রেই কার্যকর,” বিবিসি বাংলাকে বলেন আইসিডিডিআরবি’র জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী রাশিদুল হক।

২০০৯ সাল থেকে এই ডেঙ্গু টিকার পরীক্ষা শুরু হয়। বাংলাদেশে এই টিকা পরীক্ষার সাথে যুক্ত দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন আইসিডিডিআরবি’র জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী রাশিদুল হক।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে পরীক্ষার আগে এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রাজিলেও পরীক্ষা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিল- দুই দেশেই প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের দুটি পরীক্ষাই করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রাশিদুল হক বলেন, যে কোন টিকা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়- এই তিনটি ধাপে পরীক্ষা করা হয়। প্রথম ধাপে দেখা হয় যে, ওই টিকাটি মানুষের দেহে প্রয়োগের জন্য নিরাপদ কী না।

দ্বিতীয় ধাপে দেখা হয়, টিকার নিরাপত্তা এবং এটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির সক্ষমতা।

আর তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় এটির কার্যকারিতা দেখা হয়। অর্থাৎ যে জনগোষ্ঠীর উপর টিকা পরীক্ষা করা হয় তাদের মধ্যে কেউ আবারো ওই রোগটি দ্বারা আক্রান্ত হয় কী না।

মি. হক জানিয়েছেন, বাংলাদেশে যে ট্রায়াল বা পরীক্ষাটি হলো সেটি শুধুমাত্র দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা। অর্থাৎ এই টিকার নিরাপত্তা এবং এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে কী না সে বিষয়টিই পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে।

ট্রায়ালের আওতায় ২০১৫ সাল থেকে ক্লিনিকাল ট্রায়াল ও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ে পড়াশুনাসহ পরীক্ষা চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা তৈরি করা হয়। পরে ২০১৬ সাল থেকে ডেঙ্গুর টিকার দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু হয়।

এর আওতায় গবেষকরা এক থেকে ৪৯ বছর বয়সী ১৯২ জনের উপর টিকা প্রয়োগ করেন এবং পরবর্তী তিন বছর ধরে তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করেন। পরীক্ষায় অংশ নেয়া সবাই স্বেচ্ছায় এতে অংশ নেন এবং তাদেরকে দৈব-চয়ন পদ্ধতিতে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচন করা হয় বলে জানানো হয়।

টিকা দেয়ার আগে এদের সবাইকে চারটি আলাদা ভাগে ভাগ করা হয়। এদের মধ্যে এর আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তিও ছিলেন।

তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা ভারতে করা হবে। চলতি মাস থেকে এই পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে বলেও জানান আইসিডিডিআরবি এর বিজ্ঞানী রাশিদুল হক।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

Most Popular